একটি প্রেমের আদ্যোপান্ত

Sadat Mahmud
0






 অমলেশ দা একজন খুব ভালো মানুষ, তিনি আমাদের ভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সে আমার কলিগ। তার বয়োস বোধকরি এই চল্লিশ ছুঁই ছুঁই হবে..... উনি এখনো কুমার অর্থাৎ অবিবাহিত। তাহার ভাষ্য মতে উনি নাকি উনার সমস্ত জীবন আত্মনীয়োগ করিয়াছেন পদার্থ বিজ্ঞানের কল্যাণার্থে......যাহা নাকি একটি মহোৎ উদ্দেশ্য...!! তাই বিবাহ সাদির মতো নগ্য কাজ যাহার উদ্দেশ্য মহৎ নহে, তাহার সহিত উনার কোন বনিবনা নাই। সে যাই হোক যদিও বা আমি দাদার সাথে একমত নই.....


তবে বেশ কিছু দিবস যাবত আমি লক্ষ করছি উনার মাঝে বেশ একটা আনমোনা আনমোনা ভাব বিরাজ করছে.....যাকে বলে আরকি দেবদাস টাইপের একটা ভাব..... 

একদিন অমলেশ দা আমাকে ডাকলেন তার বাড়িতে । তবে কি উদ্দেশ্য তা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ধোঁয়াসাই রইল।

আমি অমলেশ দার বাড়িতে পৌঁছলাম তিনি আমাকে উনার বসার ঘরে বসতে দিয়ে নাস্তা  আনতে গেলেন......

একটু পর গরম কফির কেটলি আর সাথে বাটার টোস্ট নিয়ে আসলেন .....আহা কফির যা ঘ্রান বেরিয়েছে না..!! ক্যাপাচিনো.....কফির এই ফ্লেভার টা আমার খুব প্রিয়....

যই হোক এবার মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক..... 

তিনি কিছু একটা আমকে বলতে যাবেন ঠিক এমন সময় মিঃ ডিকেন্সন এর এন্ট্রি....

মিঃ ডিকেন্সন.....অমলেশ দার বন্ধু উনি.....নিউইয়র্ক সিটি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক..উনি বাংলাদেশে তার একটি রিসার্চের কাজে এসেছিলেন....

অমলেশ দা আমাকে বললেন যে রাশেদ তুই আমার ঘরে গিয়ে বস আমি  ডিকেন্সন কে আমার নতুন ল্যাবটা দেখিয়ে নিয়ে আসি....।

অগত্যা কি করার আমি গিয়ে দাদার ঘরে গিয়ে বসলাম। দাদার ঘরে গিয়ে বসতেই দাদার টেবিলে একটি ডায়েরী লক্ষ করলাম... পাশেই একটি পুরোনো চিঠির খাম

লিখা আছে ইতি তোমার নিলাঞ্জনা..... বুঝলাম এটা নিলাঞ্জনা দির চিঠি....মনে আছে অমলেশ দা একবার বলেছিল... নিলাঞ্জনা দি দাদার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড.....

আমার তৎক্ষণাৎ বুঝতে কিছুই আর বাকি রইলো না....দাদার মনে সম্ভবত প্রেমের এক লাল পুষ্প প্রস্ফুটিত হইয়াছে....

তাই আমি আর লোভ সামলাতে পারলাম না... আমলেশ দার অনুমতি ছাড়াই ডাইরিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম.....ডায়রিতে যা লিখা ছিল তা আপনাদের কে পড়ে শোনাচ্ছি....

আমি বিগত কয়েক দিন যাবৎ ভিষন চিন্তায় মগ্ন.... একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে ভাবিতেছি...., বিষয়টি হইল যে.......

আপনি কিভাবে বুঝিবেন যে,

 আপনি প্রেমে পড়িয়াছেন.....?

Well I Think

প্রেমে পড়িলে সবার আগে যাহা ঘটে তাহা হইলো 

মানুষ তাহার  ব্যক্তিত্ব হারায়....

এমতাবস্থায় উক্ত অতী তাতপর্য পূর্ণ ঘটনা ঘটিবার পর....যাহা ঘটিতে চলিয়াছে তাহার বিবরন মোটামুটি এমন ভাবে বর্ণণা করা যায়.....

আপনার সাহসের লেভেলটা হটাৎ করেই আউট অফ কন্ট্রোল হইয়া যাইবে।

আপনার ভাষাগত কিছু পরিবর্তন উপলব্ধি করিবেন। কথার মাঝে বেশ  একটা কবি কবি ভাব, মানে যাকে বলে আরকি সাহিত্যক টাইপের একটা ভাব চলিয়া আসিবে...

কিছু কবিতা ও ছন্দ রচনাতেও মনোনিবেশ করিবেন বটে। তবে, খুব ভালো না হলেও, মোটামুটি একটা সাকসেস পয়েই যাবেন...

ইহার পর হয়ত আপনি নিজেকে এক মহান প্রেমিক পুরুষ অথবা মহীয়সী এক প্রেমিকা ভাবিতে শুরু করিবেন... 

কিছু হৃদয় তোলপার করিয়া তোলা প্রেম-সঙ্গিতের কলোদ্ধনি হৃদমাঝারে লালন করিতে করিতে শ্রবণ করিবেন....

এবং এরই সাথে নিজের কল্পনার রাজ্যে এক  গভীর ডুব দিবেন এবং সেই রাজ্যে আপনি আপনার তথাকথিত স্বপ্নের রাজকন্যা অথবা রাজকুমারের সাথে এক ইন্দ্রজালের মায়ায় ভাসিবেন....সেখানে আবার কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাও ঘটিবে যেমন বাংলা সিনেমায় নায়ক নায়কার ধাক্কা লাগিবার পরের সিনের মতোই দুজনে নৃত্য করিতে থাকিবেন...

যাই হোক এই রাজ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নহে় কি়জানি হটাৎ করিয়া কিইবা চলিয়া আসে.... উফ্... আপনারা না বুঝতে চাননা...আরে বাবা আমি বলতে চাচ্ছি যে যাইগাটা আসলে আমাদের জন্য নিরাপদ নয়.. যেকোনো সময় অযাচিত যেকোন অলিক কল্পনা চলে আসতে পারে যাহা আমাদের দৃষ্টির জন্য উন্মুক্ত নহে।

যাই হোক এবার প্রসঙ্গে ফেরাযাক.....


এর পরের ঘটনা প্রবাহ যা ঘটিবে তাহা বর্ণনা করিতেছি.....

আপনার আসেপাশে বেশ কিছু মানুষের জনসমাগম ঘটিবে এবং তাহারা যে নিজ স্বার্থেই আপনার কাছে আসিয়াছে সেটা মোটামুটি আমি নিশ্চিত......তাহাদের অন্তর মাঝে লুকাইয়িত স্বার্থ কি সে বিষয়টিকে আমি পরে আলোকপাত করিতেছি আপাতত ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা প্রয়োজন,..তাহারা আপনার কাছে এসিয়া আপনার হৃদয় মৌচাকে যে সুমিষ্ট মধু জমিয়াছে তাহার চারদিকে ভনভন করিতে থাকিবে....যদিও বা সেই মধু ভক্ষনের হাভিলাস  তাহাদের নাই। এবং উহা মুখ্য উদ্দেশ্য ও নয়ষ বটে়। তাহারা আপনাকে এক মহান প্রেমিক পুরুষ অথবা এক মহীয়সী প্রেমিকা হওয়ার জন্য পেষনার যোগান দিবে...এবং ক্ষেত্র বিশেষে ক্ষতরনাক সব পদক্ষেপ নিতেও দিধা করিবে না....যাই হোক সেগুলো আপাতত আলোচনার বিষয় নহে।

এখন আপনি ওদের ক্ষতরনাক সব পদক্ষেপ দেখিয়া নিজেকে বীর্যবান ভাবিয়া এমন কিছু উদ্ভট কার্য করিয়া বসিবেন যাহা নৈতিকতা বিরুদ্ধও বটে।

এই সকল কিছুই আপনি করিবেন আপনার তথাকথিত মনের মানুষের জন্য....

এখন বর্ণণা প্রয়োজন আপনার মৌচাকের চারিপাশে ভনন করিতে থাকা ভ্রমররা কে বা কাহারা....


আসলে ইহাদের পরিচয় হইল..... ইহারা কেহই নয় আপনার স্বার্থান্বেষী বন্ধু মহোল

ইহাদিগরা কি বা কোন আন্ততুষ্টির জন্য  আসিয়াছে তাহা একান্তই জানা প্রয়োজন

এখানে এক প্রজাতির ভ্রমর আসিয়াছে মজা লুটিবার জন্য....

আপনি যে মধুর অনুনে জ্বলিতেছেন উহার মজা লুটাই তাহাদের আত্মতুষ্টি।

আবার আরো এক শ্রেণীর ভ্রমর প্রজাতিও আপনি লক্ষ করিবেন... ইহাদিগকে ভ্রমর না বলিয়া ভিমরুল বলাই উত্তম....ইহারা আসিয়াছে আপনার সাথে পুরানো হিসাব কিতাব চুকাইবার জন্য.... অর্থাৎ ইহারা আপনার সাহায্যের বদলে ঝোপ বুঝিয়া কোপ মারিবার জন্য সদা প্রস্তুত....

আপনি আরো এক প্রকার ভ্রমর প্রজাতিও লক্ষ্য করিবেন, যাহাদের কে আমি মধুমাক্ষি বলিয়াই সম্মোধন করিতে বাঞ্ছনীয় বোধ করিতেছি। মধুমক্ষি যেমন নিঃস্বার্থে মধু সংগ্রহ করিয়া আমাদিগদের জন্য স্বযত্মে মৌচাকে সংরক্ষণ করিয়া থাকে.... তেমনি এই প্রজাতি নিজ স্বার্থে নয় বরং নিঃস্বার্থভাবে আপনার জন্য জান  পর্যন্ত বাজি রাখিবে.... আসলে ইহারাই আপনার প্রকৃত বন্ধু।


এখন আবার কেন্দ্রীয় কান্ডে ফেরাযাক....

এর পরে একটি অভিনব ঘটনা ঘটিবে যাহা আপনার জন্য অত্যন্ত তাতপর্য মন্ডিত বিষয়টি আসলে এই  যে, আপনি এখন এক ভাগ্য লটারি খেলিতে চলিয়াছেন ইহাতে কৃতকার্য বা অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা কত টুকু ইহা মূখ্য বিষয় নহে়....মূখ্য বিষয় আপনি কৃতকার্য হলেও এক বিভীশিকার মাঝে পরিবেন অকৃতকার্য হলেও এক বিভীশিকার মাঝে পরিবেন।


এই লটারি আসলে আর কিছুই নহে় ইহা আপনার তথাকথিত স্বপ্নের রাজকন্যা অথবা রাজকুমার কে আপনার মনের মাঝে প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় একটি বাক্য যাহার ভাবাদান করিতে হইবে। বাক্যটি নেহাতি ছোট তবে এর তাতপর্য তুমি উপলব্ধি করতে অক্ষম হেতু ইহার ভার সবাই বইতে পারেনা.... এইরকম একটি তাতপর্য মন্ডিত  বাক্য শোনার পর তোমার তথাকথিত রাজকন্যা অথবা রাজকুমার যদি ইহা গ্ৰহনেরযোগ্যতা সম্পন্ন হয় তবেই সে তথাকথিত হতে তোমার একান্ত মনের মানুষে পরিনত হইবে নতুবা সে তোমাকে এক বিষাদময় বেদনায় পরিপূর্ণ অর্ণবে নিক্ষেপ করিবে যাহার কোন কূলকিনারা নাই...এবং আপনি অকৃতকার্য হওয়ার তকমা লইয়া হয়তবা কতকবার আত্মহননের কথাও ভাবিবেন বটে...


যদি অকৃতকার্য হন তবে আপনার অতিরঞ্জিত অথবা উদ্ভট কোন কর্ম সম্পাদনের কোন প্রয়োজন নাই অর্থাৎ.....এতে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য যাহির করা বৃথা

এতে আসলে কিছুই হাসিল হবার নহে...বরং হীতে বিপরীত হইতে পারে এবং আপনি কোন অপকর্ম ঘটাইয়া একুল ওকুল দুকুল ই হারাইতে পারেন যাহা সমিচিত নহে,এমন ও হইতে পারে যে আপনি অনল দমন করিতি গিয়া খোদ আপনি ইন্ধ হইয়া না যান...ইহার ফলে যাহা ঘটিতে পারে তাহা হইল আপনার হৃদয়ের মাঝে জ্বলিতে থাকা 

অগ্নি...দাবানল রূপে আপনার পরিবার ও সমাজে ছরিয়া পড়িবার আশংকা থাকে এবং চরম বিশৃঙ্খলা প্রকট হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ পায়।

হেতু আপনার করনীয়....উক্ত পরিস্থিতির গুরুভার স্রষ্টার উপর ন্যস্ত করিয়া নীরবতা পালন করুন। ইহাই আপনার জন্য কল্যাণকর বইকি...!

এইবার আমরা ঘটনা প্রবাহে একটু নজর করিয়া দেখিবার চেষ্টা করি যদি আপনি কৃতকার্য হইয়া যান তাহা হইলে কি ঘটিতে পারে...


আপনি আপনার তথাকথিত মনের মানুষ কে ঐ ভাগ্য লটারির ভাব বাক্য বিনিময় করিবার পর যদি সে উহা গ্ৰহনের যোগ্যতার প্রমাণ দেখাইয়া আপনার তথাকথিত মনের মানুষ হইতে আপনার একান্ত মনের মানুষে পরিনত হয়, তাহা হইলে আপনি

এক মহা গুরু দায়িত্ব ভার প্রাপ্ত হইবেন। আপনি যাহা ভাবিতেছেন এই দায়িত্ব তাহার চেয়েও অধিক ভার সম্পন্ন হেতু ইহা সবার পক্ষে বহন করা ও সম্ভাব নহে।

এই গুরু দায়িত্ব প্রাপ্ত হইয়া নিজেকে আহামরি কিছু মনে করিয়া জাহির প্রকাশ করা নিতান্তই গন্ড মূর্খামি বই আর কিছুই নহে।


এই গুরু দায়িত্ব সিদ্ধহস্তে লইয়া সামনে অগ্ৰসর হওয়ার পথে যে অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হইতে চলিয়াছেন তহা উতরাইয়া আপনার মনের মানুষের সহিত হৃদয় বীণা বাঁধিয়া.....এক অনন্ত কালের পানে যাত্রা করিবেন যহা মৃত্যুঞ্জয়ী......

আমি এতটুকু পড়েই ডায়েরিটা অফ করলাম দেখি অমলেশ দা ও চলে এসেছে....

এই সিরিজের পরের পর্ব টি শিঘ্রই আসবে যদি আপনারা সারা দেন...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)