ভালো ইহুদী খারাপ ইহুদি

Sadat Mahmud
1


খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক, আশাকরি উত্তর পাবেন... রাজনীতি এমন একটি জিনিস যা সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বিষয় নয়...  রাজনীতির অর্থই হলো স্বার্থ আদায়ের লড়াই। এইখানে স্বার্থ আদায়ের জন্যই নীতি প্রয়োগ করা হয় । কখনো রাষ্ট্র পরিচানার জন্য সংশ্লিষ্ট স্বার্থ, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে  জাতির বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য নীতি প্রয়োগ করা  হয়।

যেমন ভারত আমাদের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি মেনে পানি দেয় না। আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। তারা সীমান্তে মানুষ হত্যা করে এইটাও একটা বৈষম্য। কিন্তু আমাদের সরকার বুদ্ধিজীবি সাংস্কৃতিক কর্মীরা কিছু বলে না । যদিও বা এটি দেশের স্বার্থের সথে জড়িত কিন্তু ব্যক্তিগত আর দলীয় স্বার্থ এইখানে প্রাধান্য পায়। আবার বাংলাদেশ পাকিস্তান শত্রু দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্থানের কাজ থেকে রাডার কিনে। সামরিক অস্ত্র কিনে যেমন আর্টিলারি শেল, বিমান মেরামতের যন্ত্রাংশ ইত্যাদি। এগুলো হলো কিছু রাজনীতির উদাহরণ। বৈশ্বিক রাজনীতির কথা যদি বলি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা না হওয়ার কারণে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। কিন্তু এই একই আমেরিকান আর রাশিয়ানরা একসাথে আইএস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল । এখন তারা নিজেরাই শত্রু। আবার আমেরিকা রাশিয়াকে স্যাংশন দিয়েছে কোনো দেশ যাতে তাদের কাছ থেকে তেল গ্যাস না কিনতে পারে। অথচ তারা রাশিয়ান দের কাছ থেকে ঠিকই ইউরেনিয়াম আর মূল্যবান খনিজ কিনছে, যেই খনিজ দিয়ে মাইক্রোপ্রসেসর আর মিসাইল বানানো হয়। রুশরা সেই মাইক্রোপ্রসেসর আমেরিকার কাছ থেকে কিনে মিসাইল বানাচ্ছে।
মোট কথা সব স্বার্থের খেলা। স্বার্থ কি এইটা বোঝা গেলো।
এখন ইহুদী ধর্ম নিয়ে মানুষের কিছু বিভ্রান্তি দূর করি ইহুদী আর মুসলিমরা কেনো একি জাতির অংশ এবং কেনইবা তারা আমাদের শত্রু‌ ? ইহুদীরা হলো মুসা (আঃ) এর জাতি। মুসলিম এবং ইহুদিরা সিমেটিক এবং মনোথিয়েস্টিক অর্থাৎ তারা ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশধর এবং এক ঈশ্বরবাদে  বিশ্বাসী। তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে মুসলিমদের মতোই । তারা আমাদের মতো রোযাও রাখে, তাদের প্রার্থনা আর আমাদের নামাজ দেখতে প্রায় হুবহু একই রকম।
তাদের সাথে মুসলিমদের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো একই ঈশ্বর কে মানি আমরা, সব নবীদের মানি
তাহলে দ্বন্দ্ব কোথায় ? তারা খ্রিস্টান দের নবী ঈশা (আঃ) (খ্রিস্টানরা তাদের দেবতা বানায় নিয়েছে) কে জারজ সন্তান বলে আর আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ইয়াকুব (আঃ) এর বংশে জন্ম না নেওয়ার কারণে এবং ইসমাইল (আঃ) এর বংশে জন্মগ্রহণ করার জন্য তারা তাকে অস্বীকার করে। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের কোরআনকে অস্বীকার করে। যা আল্লাহ সুবাহানাতালার আদেশ অমান্য করা। আল্লাহ কুরআনের মধ্যে স্পষ্ট করেছেন ইহুদীরা  সত্য জানে তবুও তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সত্যকে অস্বীকার করে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আরো বলেন মুসলিমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদেরকে অনুসরণ করবে তারা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে এবং পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি হিংসা করে।  আল্লাহ ইসমাইল (আঃ) এর বংশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে প্রেরণ করেছেন। তাদের অভিযোগ কেন বনী ইসরাঈলের গোত্রে আল্লাহ নবী পাঠালেন না। চিন্তা করা যায় সৃষ্টিকর্তার উপর অভিমান !!
তারা যে সত্যি আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তার একটি উদাহরণ দেখা যাক, ইহুদি ধর্ম মতে মূর্তিপূজকদের হত্যা করতে হবে। এর আওতায় ক্রিশ্চানরা এবং হিন্দুরা উভয় পরে, অথচ মুসলিম ও ইহুদিরা এই দুই ধর্মের মানুষ একই ঈশ্বরকে মানি তবুও তারা আমাদেরকে সহ্য করতে পারে না । যে কারণে প্যালেস্টাইনে এই বর্বরতা চালাচ্ছে তারা। তারা মুসলিম মুক্ত পৃথিবী চায়। তাহলে এখান থেকে আমরা বুঝলাম ইহুদিদের সাথে আমাদের যুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের লড়াই সত্য এবং মিথ্যার লড়াই।

এই লড়াইয়ের ভেতরে কি কি পড়ে ? সামরিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ধরনের যুদ্ধ। যে সব কিছু কন্ট্রোল করবে বা যার প্রাধান্য বেশি থাকবে সেই বিজয়ের বেসে থাকবে আর পরাজিত দল তাদের অনুগত হয়ে থাকবে।

মুসলিমদের যখন খিলাফত ছিল তখন ইহুদিরা মুসলিমদের অনুগত ছিল। তখন ইহুদি আর মুসলিমদের মাঝে কোন যুদ্ধ হতো না। অথচ খ্রিস্টানদের সাথে হতো।
কিন্তু ইহুদিরা যখন ক্ষমতা পেল তারা খ্রিস্টানদের কে গোলাম বানালো এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা শুরু করল । আস্তে আস্তে গোটা মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস করল এখন তারা সরাসরি যুদ্ধ করছে আমাদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে, ছোট ছোট শিশুদের বিরুদ্ধে। আল্লাহ কুরআনের মধ্যে বলেছেন তারা তোমাদের শিশুদেরকে হত্যা করে তোমাদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য । চৌদ্দশ বছর আগের কথা যখন আল্লাহ এই আয়াতগুলো প্রেরণ করেছিলেন এখন এগুলোই সত্য।

এখন সফট ড্রিংকস বিষয়ে আসি... মুসলিমরা তাদের পণ্যটি বয়কট করেছে দুটি প্রধান কারণে-
প্রথমত তারা সরাসরি ইসরাইলের যোদ্ধাদেরকে ফ্রি খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং করছে সাথে তারা তাদেরকে সমর্থন ও করে যাচ্ছে। ৩৫ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পরও তারা তাদের অবস্থান থেকে অনড়। যেখানে জাতিসংঘ পর্যন্ত ইজরাইলের বিরুদ্ধে চলে গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ ইজরাইলকে স্যাংশন দেয়ার কথা ভাবছে সেখানে এই কোম্পানি তাদেরকে অনৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়েই যাচ্ছে। তাদের পণ্য বয়কট করে তাদেরকে অর্থনৈতিক চাপে রাখা আমাদের একটি  কৌশলগত অবস্থান । তাদের ঘৃণা করি সেজন্য নয়। এছাড়া আরো  একটি কৌশলগত কারণ রয়েছে, এই কোম্পানির পণ্য বর্জন  করার মাধ্যমে দেশীয় কোম্পানি গুলো কে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আমাদের। এতে আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

এখন দ্বিতীয় বিষয় যে সকল প্রযুক্তির বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে আমরা সেগুলো বয়কট করছি না কেন। চলুন আগের একটি উপমা দেখি- ধরুন আপনি আপনার দাদার রেখে যাওয়া একটি পুরোনো ছুরি পেয়েছেন । অনেক কারুকাজ খচিত অনেক সুন্দর একটি ছুরি । এটিকে বানিয়েছিল বিখ্যাত একজন এবং ব্যবহার করত বিখ্যাত একজন। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই ছুরি  আপনি ব্যবহার করবেন এবং সেটা আপনি ব্যবহারও করছেন সবজি কাটার জন্য । আপনি কিছুদিন পর জানতে পারলেন ১০০ বছর আগে এই ছুরি দিয়েই তিনজন মানুষেকে হত্যা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন এই ছুরি নিয়ে আপনি কি করবেন। ফেলে দেবেন ? ব্যবহার করবেন ? নাকি মিউজিয়ামে রাখবেন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি ব্যবহার করতে পারেন মিউজিয়ামে রাখতে পারেন অথবা ফেলেও দিতে পারেন। এই ছুরি দিয়ে কেও খুনও করে আবার কেউ সবজি কাটতে পারে তাই বলে কি ছুরি বয়কট করবেন নাকি ?? বিষয়টা ঠিক তেমন।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক এই ছুরির মত এটি দিয়ে ভালো কাজ করা যায় খারাপ কাজও করা যায় এইসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক মুসলিমরা একত্রিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তুলেছে। আর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয় এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছে প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানী অনেকেই মানবজাতির যত জ্ঞান রয়েছে সবকিছুর সংমিশ্রণে এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি। এখানে অনেক মেধাবী মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ অনেক ধর্মের মানুষ একসাথে কাজ করে ও গবেষণা করে এবং নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করে। এ প্রতিষ্ঠানের মূল হচ্ছে অবকাঠামো ও জ্ঞান খাদ্য নয়  আর জ্ঞানকে বোকারাই পরিত্যাগ করে। আমরা বোকা নই তাই পরিত্যাগ করিনি। তারা জ্ঞান আমাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছে আমরা একই জ্ঞান তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছি। তফাৎটা এখানেই। আর আপনার যদি জানা না থাকে সেক্ষেত্রে বলছি যেসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ আছে তারা কোন পক্ষকে সমর্থন করেনি এবং উভয় পক্ষের নিরীহ জনগণের মৃত্যুর বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আমাদের চাওয়া তো এটাই ছিল।

এখন চলুন দেখি ইসলামিক শরীয়া মতে এ ধরনের অবরোধ দেয়া কি জায়েজ ? হ্যাঁ জায়েজ.. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ সকল কিছুই বর্ণিত হয়। উনি ইহুদি বণিক দের সাথে ব্যবসা করেছেন, ইহুদিদেরকে মূর্তি পূজারীদের থেকে মক্কায় নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন (মূর্তিপূজকরা ইহুদীদের ঘোর  শত্রু ছিল)।
ওমর (রাঃ) জেরুজালেম ঘেরাও করেছিলেন এবং জেরুজালেম হস্তান্তরের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। অবশেষে মুসলিমদের কাছে নত হয়ে তৎকালীন খ্রিস্টানরা জেরুজালেমকে মুসলিমদের অধীন করে দেয়।
ইসলাম শুধু নামাজ রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ইসলামে রয়েছে রাজনৈতিক কৌশল, সামরিক কৌশল, অর্থনৈতিক কৌশল এমন কি দেশ পরিচালনার নীতি সবকিছুই।
আশা করি আপনাদের সম্পূর্ণ উত্তর পেয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন